এশার নামাজ কয় রাকাত ও এশার নামাজ পরার নিয়ম

৫ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে ফজরের নামাজ ও এশার নামাজ সব চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এশার নামাজ সম্পর্কে একটি হাদিস রয়েছেঃ যে বেক্তি ফজর ও এশার নামাজ জামাতের সাথে আদায় করলো সে যেন সারারাত দারিয়ে সালাত আদায় করলো। (মুসলিম)

আমাদের আজকেই এই পোস্টে এশার নামাজ কয় রাকাত কি কি ও কিভাবে পরতে হয় সে সম্পর্কে সকল বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আমাদের আজকের এই পোস্টটি যদি আপনিওশুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পরেন তাহলে অনেক জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন।  মহিলা এবং পুরুষদের নামাজ পড়ার নিয়মে কিছু ভিন্নতা আছে।সে সকল বিষয় নিয়েই আজকে আমাদের এই আলোচনা।

এশার নামাজ কয় রাকাত ও এশার নামাজের নিয়ত

এশার নামাজ চার রাকাত সুন্নত, চার রাকাত ফরজ এবং দুই রাকাত সুন্নত। অর্থাৎ এশার নামাজ মোট ১০ রাকাত। চার রাকাত ফরজ বাধ্যতামূলক। অর্থাৎ কোনভাবে বাদ দেওয়া যাবে না। এশার নামাজের পর তিন রাকাত বেতর নামাজ আদায় করতে হয়। বেতর নামাজ এশার নামাজের মধ্যে পড়ে না।

এশার চার রাকাত সুন্নত এর নিয়তঃ নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা আরবাআ রাকয়াতি এশায়ি সুন্নাতু রাসূলিল্লা-হি তায়ালা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

এশার চার রাকাত ফরজের নিয়তঃ নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা আরবাআ রাকায়াতি এশায়ি ফারদুল্লাহি তাআলা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

এশার চার রাকাত সুন্নত এর নিয়তঃ নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা রাকায়াতি সালাতিল এশায়ি সুন্নাতু রাসুলিল্লা-হি তাআলা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

এশার নামাজ কয় রাকাত

এশার নামাজ ৪ রাকাত ফরজ যেটা জামাতের সাথে আদায় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে কেউ যদি মাঝে মধ্যে জামাতে উপস্থিত হতে না পারে তবে বাড়িতেই একাকী পড়তে পারে। ফরজের পূর্বে রয়েছে ৪ রাকাত সুন্নাতে যায়িদা বা সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদাহ যা পড়লে অনেক নেকি রয়েছে কিন্তু না পড়লে কোন গুনাহ নেই।

এবং ফরজের পরে রয়েছে ২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং রাসুল (সঃ) কোনদিন সেটা ছাড়েননি। এশার নামাজের পর রাতে আরেকটি বিশেষ সালাত রয়েছে যার নাম বিতর সালাত যেটা এশার সালাতের অন্তর্ভুক্ত নয়। বিতর সালাত ১, ৩, ৫, ৭, ৯, ১১ রাকাত পর্যন্ত পড়া যায়। বিতর নামাজ রাতের শেষভাগে পড়া উত্তম তবে কেউ যদি মনে করে রাতের শেষভাগে উঠতে সক্ষম হবে না তাহলে সে এশার নামাজের পরপরই পড়ে নিতে পারে।

এশার নামাজের নিয়ম সংক্ষিপ্ত

তাকবীরে তাহরীমাঃ ওযু করার পর নামাজের জন্য ক্বিবলামুখী হয়ে দাড়িয়ে ‘আল্লা-হু আকবর’ বলে দুই হাত কাঁধ বরাবর উঠিয়ে তাকবীরে তাহরীমা শেষে বুকের নিচে বাঁধতে হবে। এ সময় বাম হাতের উপরে ডান হাত কনুই বরাবর রাখবে অথবা বাম কব্জির উপরে ডান কব্জি রেখে বুকের নিচে হাত বাঁধবে। তারপর সিদার স্থানে নজর রেখে সোজা হয়ে দাড়িয়ে ছানা পাঠের মাধ্যমে মুছল্লী তার সর্বোত্তম ইবাদত সালাত আদায় শুরু করবে।

সূরা আল-ফাতিহা পাঠ করাঃ  দোয়ায়ে ইস্তেফতাহ বা ছানা’ পড়ার পর সূরা আল-ফাতিহা আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহর সাথে পাঠ করতে হবে এবং অন্যান্য রাকাতে আউযুবিল্লাহ বাদে কেবল বিসমিল্লাহ বলে সূরা আল-ফাতিহা পড়তে হবে। জেহরী সালাত হলে সূরা আল-ফাতিহা পড়ার পরে “আমীন” বলতে হবে।

কিরাআতঃ  সূরা ফাতিহা পড়া শেষ হলে ইমাম কিংবা একাকী মুসুল্লি হলে প্রথম দুই রাকাতে কোরআনের অন্য কোন সূরা বা কিছু আয়াত তিলাওয়াত করতে হবে। কিন্তু জেহরী সালাতের সময় মনে মনে কেবল সূরা ফাতিহা পড়বে এবং ইমামের কেরাত মনোযোগ দিয়ে শুনবে তবে যোহর ও আসরের সালাতে ইমাম-মুক্তাদী সকলে প্রথম দুই রাকাতে সূরা ফাতিহা সহ অন্য সূরা পড়বে এবং শেষের দুই রাকাতে সুধু সূরা ফাতিহা পাঠ করবে।

আরোও পড়ুন>>> 

 রুকুঃ রুকুতে রাসূলুল্লাহ (স.) হাঁটুতে হাত রাখতেন এবং তাঁর পিঠ সোজা রাখতেন। অর্থাৎ মাথা থেকে কোমর পর্যন্ত তার পিঠটা মাটির সমান্তরালে এমন সোজা করে রাখতেন। যার উপর পানি রাখলেও ওই পানি সমান উচ্চতায় স্থির হয়ে থাকবে।(ইবনে মাজাহ: ৮৭২)

ক্বওমাঃ  অতঃপর রুকু থেকে উঠে সোজা ও স্থির ভাবে দাঁড়াতে হবে। এসময় দুই হাত কিবলামুখী খাড়া রেখে কাঁধ পর্যন্ত উঠাবে এবং ইমাম ও মুক্তাদি সকলে বলবে ‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ’ (আল্লাহ তার কথা শােনেন, যে তার প্রশংসা করে)। তারপর কওমার দোয়া ’রব্বানা লাকাল হামদ’ (হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার জন্যই সকল প্রশংসা) অথবা ‘রব্বানা ওয়া লাকাল হামদু হামদান কাসীরান ত্বায়্যিবান মুবা-রাকান ফীহি’ (হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার জন্য অগণিত প্রশংসা, যা পবিত্র ও বরকতময়) একবার পড়বেন।

এশার নামাজ কয় রাকাত পড়তে হয়

সিজদাঃ সিজদায় যাওয়ার নিয়ম হলো শরীরের যে অঙ্গ জমিনের সবচেয়ে বেশি নিকটবর্ত সিজদার সময়ে সেই অঙ্গ সর্বপ্রথম জমিনে নিকটবর্তী হবে। সুতরাং সিজদা সময়ে সর্বপ্রথম হাঁটু জমিনের নিকটবর্তী হবে বা রাখা হবে। এরপর ক্রমান্বয়ে হাত, নাক ও তারপর কপাল রাখা হবে। সিজদা লম্বা হবে ও পিঠ সােজা থাকবে। যেন নীচ দিয়ে একটি বকরীর বাচ্চা যাওয়ার মত ফাকা থাকে।

সিজদা থেকে উঠে বাম পায়ের পাতার উপরে বসবে ও ডান পায়ের পাতা খাড়া রাখবে। এ সময় স্থিরভাবে বসে দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকের দোয়া পড়বে। অতঃপর আল্লা-হু আকবর’ বলে দ্বিতীয় সিজদায় যাবে ও সিজদার দোআ পড়বে। রুকু ও সিজদায় কুরআনী দোআ পড়বে না। ২য় ও ৪র্থ রাকআতে দাঁড়াবার আগে সিজদা থেকে উঠে সামান্য সময়ের জন্য স্থির হয়ে বসবে। অতঃপর মাটিতে দু’হাতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে যাবে।

বৈঠকঃ ২ রাকাত নামাজ পড়ে বৈঠকে বসতে হয়। যদি প্রথম বৈঠক হয় তবে কেবল আত্তাহিয়াতুর পরে তৃতীয় রাকাতের জন্য উঠে দাঁড়াতে হবে। আর যদি শেষ বৈঠক হয় তবে আত্তাহিয়্যাতু পড়ার পরে দরুদ শরীফ ও দোয়ায় মাসুরা সম্ভব হলে বেশি বেশি অন্য দোয়া পড়তে হবে। এ সময় ডান পায়ের আঙ্গুল কিবলামুখী করে বস্তে হবে।

তারপর দোয়ায়ে মাছূরাহ শেষে প্রথমে ডানে ও পরে বামে আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ (আল্লাহর পক্ষ হতে আপনার উপর শান্তি ও অনুগ্রহ বর্ষিত হোক!) বলে সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করবে।

 

আশা করি, এশার নামাজ কয় রাকাত ও নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা আপনারা ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। কোথাও কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে সকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। পরবর্তীতে কোন বিষয়ে পোস্ট দেখতে চান তা আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনাদের একটি কমেন্টই আমাদেরকে নিত্যনতুন পোস্ট লিখতে উৎসাহিত করে।

Leave a Comment